গিজার মহা পিরামিড বিশ্বের সবচেয়ে আইকনিক অবকাঠামোগুলির মধ্যে একটি যা আজও মানুষকে মুগ্ধ করে৷ প্রায় ১৪৬ মিটার উঁচু এই প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভটি মিশরের গিজায় অবস্থিত এবং এটিকে প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি কুফুর পিরামিড নামেও পরিচিত। নির্মাণের বহু শতাব্দী পার হওয়া সত্ত্বেও মহা পিরামিডটি এখনও মিশরে সমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। এই ব্লগে আমরা গিজার মহা পিরামিডের ইতিহাস, রহস্য এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিষদভাবে জানতে পারবো।
![গিজার মহা পিরামিড: মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিড গিজার মহা পিরামিড: মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিড](https://i0.wp.com/blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjO0Vnmq51TBdr5vLESF1zx7kDx29jK3gs-JiULf-cu-ZT32Z9M-XFys8MEcawmMmcX9nOcbUMaVF-9dgQuqFyTnuEHglb6qkACAzNsmX3_dwOMOkxcT37xfiDSrKMvjo2RjGBMrupLnIs67J-KY5wbZ1PZ4irSjkEXofA0Qdsb9XKQPIaDauVy1JSZ6A/w400-h334/The-Great-Pyramid-Of-Giza-Pyramid-Architecture-4130316.jpg?w=694&ssl=1)
প্রাচীন মিশরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
গিজার মহা পিরামিডের ইতিহাসে ডুব দেওয়ার আগে প্রাচীন মিশরের ইতিহাস সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা থাকা প্রয়োজন। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার নীল নদের তীরে প্রায় ৩,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গড়ে উঠেছিল। এটি ছিল বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে উন্নত সভ্যতাগুলির মধ্যে একটি। এই সভ্যতা বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থাপত্য, পরিশোধিত লেখার পদ্ধতি আবিষ্কার এবং এর সমৃদ্ধশালী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য আমাদের কাছে বিখ্যাত।
My bangla blog এর সকল পোস্ট গুগল নিউজে পেতে ভিজিট করুন এখানে Google news
গিজার মহা পিরামিডের অবস্থান
গিজার মহা পিরামিডটি মিশরের গিজা মালভূমিতে অবস্থিত, যা আধুনিক কায়রোর ঠিক বাইরে নীল নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। গিজা মালভূমিতে স্ফিংস এবং বেশ কয়েকটি ছোট পিরামিড সহ অন্যান্য প্রাচীন মিশরীয় স্থাপনা রয়েছে। গিজার মহা পিরামিডটি এই পিরামিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত। এটি প্রাচীন বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের মধ্যে একটি এবং একমাত্র আশ্চর্য যা এখন পর্যন্ত টিকে রয়েছে।
গিজার মহা পিরামিডের সময়কাল
গিজার মহা পিরামিড ফারাও খুফুর শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল, যিনি ২৫৮৯ থেকে ২৫৬৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মিশর শাসন করেছেন। অর্থাৎ পিরামিডটি ৪,৫০০ বছরেরও বেশি পুরানো, যা সত্যিই এক বিস্ময়কর কীর্তি। বলা হয়ে থাকে, পিরামিডের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছিল এবং এতে প্রায় ২৩ লক্ষ পাথর খণ্ড ব্যবহার করা হয়েছিল, যার প্রতিটির গড় ওজন আড়াই টন।
![গিজার মহা পিরামিড: মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিড গিজার মহা পিরামিড: মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিড](https://i0.wp.com/blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhIVxznfWp-NCGTk45k4uIwJzQl1EGBDmdBuAT9NtyN0FUniLhseq58mJoO0risSfVYOVlG3aYB6qqxJ8d30ysN_x1m4WY3dk6-qtBOcuQg2s_fE4dJlmfOURaT6FN-DCynwo9AyiOVF3-UX7UN3H-2rfJJz0Y5ANejbZiQToAlgZCCXHncSuoF8PNGow/w400-h300/sphinx-pyramids-historic-egypt-dbf304f9598c347e7b8404310422fd73.jpg?w=700&ssl=1)
গিজার মহা পিরামিড সম্পর্কিত রহস্য
গিজার মহা পিরামিড বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় কাঠামোগুলির মধ্যে একটি। পিরামিডটি তৈরি করার সঠিক উদ্দেশ্য এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি, যদিও এটি ফারাও খুফুর সমাধিস্থল হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। কিছু গবেষকের প্রস্তাব মতে, মহা পিরামিড হল একটি মন্দির, প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ সম্পর্কিত কেন্দ্র কিংবা ফারাওদের ক্ষমতা এবং সম্পদের প্রতীক।
পিরামিডটি কীভাবে তৈরি করা হয়েছিল সেটা নিয়ে অনেক রহস্য রয়েছে। প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে আমাদের আজকের আধুনিক সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি ছিল না, কিন্তু তারপরেও তারা এমন বিশাল ও বিস্ময়কর একটি স্থাপনা তৈরি করতে পেরেছিল। কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে প্রাচীন মিশরীয়রা বিশাল পাথরের খণ্ডগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য র্যাম্প, রোলার এবং লিভার ব্যবহার করত। আবার অনেকে মনে করেন যে তারা পাথরের খনি থেকে নির্মাণস্থলে পাথরের ব্লকগুলো পরিবহনের জন্য জলপথ এবং নৌকা ব্যবহার করত। নির্মাণ কাজের সঠিক পদ্ধতি আজও একটি রহস্য হিসেবে রয়ে গেছে।
পিরামিডটির বর্তমান অবস্থা
অনেক বছর হওয়া সত্ত্বেও গিজার মহা পিরামিড তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় রয়েছে। নানা সময়ের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সত্ত্বেও এটি এখন পর্যন্ত সগৌরবে দাড়িয়ে রয়েছে। তবে কয়েক শতাব্দী ধরে পিরামিডটির বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাই ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এটি সংরক্ষণ করার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিশরীয় সরকার পিরামিডটি সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। ১৯৮০-এর দশকে স্থাপনাটিকে আরও অবনতি থেকে রক্ষা করার জন্য বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। উপরন্তু, এর গঠন এবং ইতিহাস আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য বেশ কিছু গবেষণা চলমান রয়েছে। এইসব গবেষণার ফলাফল প্রাচীন মিশরীয়দের নির্মাণ কৌশলের পাশাপাশি গিজার মহা পিরামিডের ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য সম্পর্কে বিষদভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে।
সবশেষে বলা যায়, গিজার গ্রেট পিরামিড মানব ইতিহাসের একটি সত্যিকারের বিস্ময় এবং প্রাচীন মিশরীয়দের দক্ষতার প্রমাণ। এর নির্মাণের পর বহু শতাব্দী অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও পিরামিডটি বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় এবং আকর্ষণীয় স্থাপনাগুলির মধ্যে একটি। এটি প্রাচীন মিশরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক যা সারা বিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। বর্তমানে গিজার মহা পিরামিড মিশরের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো মধ্যে একটি এবং এটি ইতিহাসবিদ, প্রত্নতাত্ত্বিক এবং প্রকৌশলীদের জন্য গবেষণা এবং অধ্যয়নের একটি জনপ্রিয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।