জিপিএস কি? জিপিএস কীভাবে কাজ করে?

ধরুন এখন দুপুর বারোটা বাজে। আপনি কি জানেন আপনার বাচ্চারা কোথায় আছে? তার হাতে থাকা ঘড়ির মাধ্যমে যদি তার পজিশন ট্র্যাক করা যায় তাহলে বিষয়টি কেমন হবে? এটি সম্ভব হবে ঘড়িতে জিপিএস রিসিভার ইন্সটল করার মাধ্যমে।

জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রযুক্তিগুলির মধ্যে একটি যা মানুষের জীবন যাত্রায় এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনে দিয়েছে। তাহলে চলুন জিপিএস কি এবং সেটা কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে জেনে আসি।

জিপিএস কি? জিপিএস কীভাবে কাজ করে?

গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) কি?

GPS (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) হল ৩১ টি সুস্পষ্ট কৃত্রিম উপগ্রহ মিলে গঠিত একটি “নক্ষত্রমণ্ডল”  যা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এবং গ্রাউন্ড রিসিভার ব্যবহার করে মানুষের জন্য তাদের ভৌগলিক অবস্থান চিহ্নিত করে। সেই অবস্থানের নির্ভুলতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১০০ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে এবং বিশেষ মিলিটারি এপ্রুভড ইকুইপমেন্ট এর ক্ষেত্রে ১ মিটারের মধ্যে। GPS ইকুইপমেন্ট বিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এখন যথেষ্ট কম খরচে এটা ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে যাতে প্রায় যে কেউ একটি GPS রিসিভারের মালিক হতে পারে। জিপিএস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মালিকানাধীন এবং পরিচালিত এটি কিন্তু বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত।

আরও পড়ুন:  বিজ্ঞান কি? বিজ্ঞানের জনক কে? - My bangla blog

জিপিএস কিভাবে কাজ করে?

সংক্ষেপে, এটি কীভাবে কাজ করে তা এখানে বলা হল: 

  • প্রতিটি স্যাটেলাইটে একটি কম্পিউটার, একটি পারমাণবিক ঘড়ি এবং একটি রেডিও রয়েছে। এর কক্ষপথ এবং ঘড়ির মাধ্যমে এটি ক্রমাগত তার পরিবর্তনশীল অবস্থান এবং সময় সম্প্রচার করে। (প্রতিটি স্যাটেলাইট একটি গ্রাউন্ড স্টেশনের সাহায্যে দিনে একবার
  • তার সময় এবং অবস্থানের ধারনা পরীক্ষা করে এবং ছোটখাটো সংশোধন করে।)
  • মাটিতে, যেকোনো জিপিএস রিসিভারে একটি কম্পিউটার থাকে যা তিনটি উপগ্রহ থেকে বিয়ারিং পেয়ে একটি “ত্রিকোণ” অবস্থান তৈরি করে। যার ফলাফল হল
  • দ্রাঘিমাংশ এবং অক্ষাংশ এর মাধ্যমে একটি ভৌগলিক অবস্থান নির্ধারণ করা, সেটি বেশিরভাগ রিসিভারের জন্যই ১০০ মিটারের মধ্যে।
  • যদি রিসিভারটি একটি ডিসপ্লে স্ক্রিন এবং একটি ম্যাপ দিয়ে সজ্জিত থাকে তবে কোনো জায়গার অবস্থানটিও দেখানো যেতে পারে।
  • তিনটি উপগ্রহের পাশাপাশি যদি একটি চতুর্থ উপগ্রহ থেকে একইসাথে রিসিভারের মাধ্যমে সিগনাল গ্রহণ করা যায় তাহলে এর মাধ্যমে ভৌগলিক অবস্থানের পাশাপাশি উচ্চতাও নির্ণয় করা যায়।
  • আপনি চলন্ত অবস্থায় থাকলেও আপনার রিসিভার আপনার গতি এবং আপনি কোন দিকে যাচ্ছেন তার দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে এবং আপনার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আনুমানিক সময়ও অনুমান করতে পারে।
আরও পড়ুন:  চিকিৎসায় নোবেল বিজয়ী হলেন সুইডিশ জিনবিজ্ঞানী সুভান্তে পাবো।

জিপিএস

বিজ্ঞানে জিপিএস ব্যবহার করে যে নির্ভুল তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় তা এর আগে অন্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব হয় নি। বিজ্ঞানীরা arctic ice sheets, পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেট এবং আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ পরিমাপ করতে জিপিএস ব্যবহার করছেন।

মোবাইল জিপিএস প্রযুক্তি আজকের স্মার্টফোনগুলিকে “ত্রিপক্ষীয়” গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এইসমস্ত সুবিধার আওতায় এনেছে৷ একটি ফোনের মধ্যে অবস্থিত জিপিএস রিসিভারও স্যাটেলাইটের সিগনাল রিসিভ করতে সক্ষম যা কোনো যানবাহনে বা পায়ে চলার সময় কোন দিকে যাওয়া উচিত সেই সব নির্দেশাবলী প্রদান করে। এছাড়াও বর্তমানের প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত স্মার্টফোনগুলি মানচিত্রে পৃথক রাস্তা এবং রাস্তার বিশেষ আকর্ষণগুলিও সনাক্ত করতে পারে এবং পাশাপাশি ট্র্যাকিং এর সুবিধাও প্রদান করতে পারে। আর এইভাবে জিপিএস সিস্টেম আমাদের জীবনযাত্রাকে করে দিয়েছে আরও সহজ এবং পৃথিবীকে এনে দিতেছে হাতের মুঠোয়।

Leave a Comment