একটি দ্বীপ যদি প্রকৃত নামের চেয়ে সাপের দ্বীপ হিসেবে বেশি পরিচিতি পায় তাহলে ধরেই নেওয়া যায় দ্বীপটি অনেক বিপজ্জনক হতে পারে। ব্রাজিলের সাও পাওলোর উপকূলে এমনই একটি দ্বীপ রয়েছে যেটা স্নেক আইল্যান্ড বা সাপের দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। যদিও এর প্রকৃত নাম হল ‘ইলহা দা কুইমাদা গ্র্যান্ডে।’ এই ছোট দ্বীপটিতে প্রচুর পরিমাণে ‘গোল্ডেন ল্যান্সহেড’ সাপ রয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে একটি। চলুন তাহলে দ্বীপটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
স্নেক আইল্যান্ড হল একটি ছোট, পাথুরে দ্বীপ যা ব্রাজিলের সাও পাওলো উপকূল থেকে প্রায় ৯৩ মাইল দূরে অবস্থিত। এটি আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১১০ একর, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৫০০ মিটার। গোল্ডেন ল্যান্সহেড সাপ এবং কয়েক প্রজাতির পাখি ছাড়া দ্বীপটি বলতে গেলে জনবসতিহীন।দ্বীপটির স্থলভাগ ঘন জংগলে পরিপূর্ণ, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায় না।
My bangla blog এর সকল পোস্ট গুগল নিউজে পেতে ভিজিট করুন এখানে Google news
স্নেক আইল্যান্ড বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ব্রাজিলে আগত অভিবাসীদের জন্য কোয়ারেন্টাইন স্টেশন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। দ্বীপটি পরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এবং গাছপালা দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিংশ শতকের মাঝামাঝির দিকে প্রথম এই দ্বীপে সোনালী ল্যান্সহেড সাপ পাওয়া যায়। হাজার হাজার বছর ধরে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে সাপগুলো বিবর্তিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সময়ের সাথে সাথে জিনগত বৈচিত্র্যের অভাবের কারণে সাপের বিষ আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
ব্রাজিলের সাপের দ্বীপ যে সাপের জন্য বিখ্যাত
গোল্ডেন ল্যান্সহেড সাপ হল পিট ভাইপারের একটি প্রজাতি যা শুধুমাত্র সাপের দ্বীপেই পাওয়া যায়। সাপগুলোর নামকরণ করা হয়েছে মূলত তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও সোনালি রঙের মাথার উপর ভিত্তি করে। এই সাপ কোনো প্রানীকে কামড়ালে প্রানীটি গুরুতর ব্যথা, ফোলাভাব এবং অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের কারণে মারা যেতে পারে। ধারণা করা হয়, দ্বীপটির প্রতি বর্গমিটারে এক থেকে পাঁচটি ল্যান্সহেড সাপ রয়েছে। এ কারণেই মূলত দ্বীপটি পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক জায়গা। উল্লেখ্য যে, সেখানে বসবাসকারী পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আলাগোয়াস কিউরাসো যা বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে বিপন্ন।
গোল্ডেন ল্যান্সহেড সাপের প্রাচুর্যতার কারণে স্নেক আইল্যান্ড পর্যটকদের জন্য একপ্রকার নিষিদ্ধ বলা চলে। ব্রাজিল সরকার কঠোরভাবে দ্বীপে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করে এবং দর্শনার্থীদের শুধুমাত্র ব্রাজিলীয় নৌবাহিনীর বিশেষ অনুমতি নিয়েই সেখানে যেতে হয়। গবেষণা করার জন্যও সেখানে অনেক নিয়ম মেনে যেতে হয়। দর্শনার্থী এবং সাপ উভয়কে রক্ষা করতে সরকার এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। যদিও এই সাপ মানুষকে কামড়ানোর খুব কমই ঘটনা আছে, তারপরেও যেকোনো ধরনের ঝুঁকি এড়াতে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।