আয়তনের দিক দিয়ে কাস্পিয়ান সাগর হল পৃথিবীর বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ পানির উৎস। এটি ইউরোপ এবং এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত যার পশ্চিমে ককেশাস পর্বতমালা এবং পূর্বে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। এর উত্তর-পশ্চিমে রাশিয়া, পশ্চিমে আজারবাইজান, দক্ষিণে ইরান, দক্ষিণ-পূর্বে তুর্কমেনিস্তান এবং উত্তর-পূর্বে কাজাখস্তান অবস্থিত।
তথ্য ও পরিসংখ্যান
- আয়তন: ১৪৩,২৪৪ বর্গ মাইল (৩৭১,০০০ বর্গ কিলোমিটার)
- সর্বোচ্চ গভীরতা: ৩,৩৬৩ ফুট (১,০২৫ মিটার)
- গড় গভীরতা: ৬৯২ ফুট (২১১ মি)
- দৈর্ঘ্য: ৬৪০ মাইল (১,০৩০ কিমি)
- সর্বোচ্চ প্রস্থ: ২৭০ মাইল (৪৩৫ কিমি)
- সর্বনিম্ন প্রস্থ: ১২৪ মাইল (২০০ কিমি)
- উপকূলীয় এলাকা: ৪,২৩৭ মাইল (৬,৮২০ কিমি)
- জলের পরিমাণ: ১৮,৭৬১ কিউবিক মাইল (৭৮,২০০ ঘন কিমি)
- উচ্চতা: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭২ ফুট নিচে (২২ মিটার)।
My bangla blog এর সকল পোস্ট গুগল নিউজে পেতে ভিজিট করুন এখানে Google news
কাস্পিয়ান সাগর এর জলবায়ু
কাস্পিয়ান সাগর সাধারণত শুষ্ক অঞ্চলে অবস্থিত। তবে তীব্র শীতে এর উত্তর দিকের অর্ধেক পর্যন্ত বরফে ঢেকে যায়। মধ্য কাস্পিয়ান প্রায় ৬২০ ফুট (১৯০ মিটার) গভীর। অপরদিকে দক্ষিণ ক্যাস্পিয়ান ৩,৩০০ ফুট (১,০০০ মিটার) এরও বেশি গভীর।
ন্যাচারাল হিস্ট্রি ম্যাগাজিন অনুসারে ১৩০ টিরও বেশি নদী কাস্পিয়ান সাগরে প্রবাহিত হয়েছে। উপনদীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল উত্তরের ভলগা নদী, উরাল নদী এবং পশ্চিমের কুরা নদী।
নিউ ওয়ার্ল্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে কাস্পিয়ান সাগরে প্রায় ৫০টি ছোট এবং বেশিরভাগ জনবসতিহীন দ্বীপ রয়েছে। এদের মধ্যে বৃহত্তম দ্বীপ হল ওগুর্জা আদা নামক একটি দ্বীপ।
এটি হ্রদ নাকি সমুদ্র?
এটিকে কাস্পিয়ান সাগর নামে ডাকা হলেও একে হ্রদ বা সমুদ্র উভয়ই বলা যেতে পারে। বেশিরভাগের মতেই এটিকে হ্রদ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে কারণ হ্রদের অনেক বৈশিষ্ট্যই এর সাথে মিলে যায়। তবে এর আকার এবং নোনা জলের কারণে এটি ঐতিহাসিকভাবে একটি সমুদ্র হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। বেশিরভাগ বিভ্রান্তির কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে সমুদ্র বা হ্রদের নির্দিষ্ট কোনো একক সংজ্ঞা নেই।
ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে সাগর সাধারণত আংশিকভাবে স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা থাকে , কিন্তু কাস্পিয়ান সাগর সম্পূর্ণরূপে স্থলভাগ দ্বারা ঘেরা। কাস্পিয়ান সাগর এর পানি নোনা হলেও নদীগুলোর কারণে মিঠা পানির প্রবাহও এসে মিশে যায়, বিশেষ করে উত্তর দিকে।
কাস্পিয়ান সাগরকে হ্রদ হিসেবে বিবেচনা করলে এটি হল বিশ্বের বৃহত্তম হ্রদ এবং বিশ্বের সমস্ত হ্রদের পানির প্রায় ৪০ শতাংশ ধারণ করে এটি।
কাস্পিয়ান সাগর এর ইতিহাস
ঐতিহাসিকদের মতে ক্যাস্পিয়ান সাগর হল প্রাচীন প্যারাথিস সাগরের একটি অবশিষ্টাংশ এবং টেথিস মহাসাগরের অংশ যা ৫ থেকে ৬ কোটি বছর আগে বিদ্যমান ছিল। সেই সময়ে টেথিস মহাসাগর আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত ছিল। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মহাদেশীয় প্ল্যাটফর্মগুলি স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে টেথিস মহাসাগর অন্যান্য মহাসাগরের সাথে তার সংযোগ হারিয়েছে। যার ফলে সেখান থেলে ক্যাস্পিয়ান সাগর, কৃষ্ণ সাগর এবং আরাল সাগরের উৎপত্তি হয়। ক্যাস্পিয়ান সাগরের বয়স প্রায় ৩ কোটি বছর বলে অনুমান করা হয়। টেথিস সাগরের লবণাক্ত পানি ক্যাস্পিয়ান সাগরের লবণাক্ততার জন্য দায়ী।
নিউ ওয়ার্ল্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে প্রত্নতাত্ত্বিকরা অনুমান করেন যে প্রায় ৭৫,০০০ বছর আগে মানুষ এই অঞ্চলে বসবাস করত। এর দক্ষিণ-পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী কাস্পি উপজাতির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। ইউরোপীয়রা সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ-সমৃদ্ধ এলাকা সম্পর্কে জানতে পেরে ১৬শ শতকে অনুসন্ধানের জন্য ক্যাস্পিয়ান সাগরে ভ্রমণ শুরু করে। ১৮২০ সালে প্রথম সেখানে অফশোর তেলের কূপ খনন করা হয়েছিল। আজ তেল ও গ্যাস শিল্প এই অঞ্চলের প্রধান অথনৈতিক দিককে নির্দেশ করে। অন্যান্য ব্যবসার মধ্যে রয়েছে লবণ আহরণ, মাছ ধরা এবং উপকূল বরাবর পর্যটনশিল্প।
ক্যাস্পিয়ান সাগরের পানির স্তর ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন সময় ওঠানামা করেছে। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে বিংশ শতকের শেষ পর্যন্ত এর পানির স্তর ১২ ফুট (৩.৬ মিটার) এর বেশি পরিবর্তিত হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে ক্যাস্পিয়ান সাগর বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল এবং ব্যাপক ধ্বংসের কারণ হয়েছিল। এরপর থেকে সেখানে আরও কয়েকটি বন্যা হয়েছে। পার্স টাইমস অনুসারে ১৯৭৮ সাল থেকে সেখানে পানির স্তর প্রায় ৭.৪ ফুট (২.২ মিটার) বেড়েছে।
কাস্পিয়ান সাগর এর জীববৈচিত্র্য
কাস্পিয়ান সাগর জীববৈচিত্র্যের জন্য সুপরিচিত। এটিকে পাখির অভয়ারণ্য বলা চলে। এছাড়াও প্রায় ২,০০০ প্রজাতি এবং উপ-প্রজাতির প্রাণী ক্যাস্পিয়ান সাগরে এবং এর আশেপাশে বাস করে । তাদের মধ্যে প্রায় ৪০০ প্রজাতি এই অঞ্চলে স্থানীয়, যার মধ্যে রয়েছে ক্যাস্পিয়ান গল, ক্যাস্পিয়ান টার্ন, স্পার-থাইড কচ্ছপ, হর্সফিল্ড জাতীয় কাছিম, ক্যাস্পিয়ান সাদা মাছ, ক্যাস্পিয়ান সালমন ইত্যাদি। ক্যাস্পিয়ান সীল এই এলাকার একমাত্র জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী।
এই অঞ্চলের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাণী হল বেলুগা স্টার্জন, যেটিকে কখনও কখনও ইউরোপীয় বা ক্যাস্পিয়ান স্টার্জন বলা হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাদু পানির মাছ যা ডিমের জন্য বিখ্যাত। তবে দিন দিন এই মাছটি বিপন্ন হয়ে পড়ছে।