আপনার যদি দিনে তিনবারের বেশি পাতলা পায়খানা হয় তবে আপনার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই কয়েক দিনের মধ্যে ডায়রিয়া ভালো হয়ে যায়।
সাধারণত ডায়রিয়া এক বা দুই দিন স্থায়ী হয় এবং আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। বাচ্চা থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক সবার জন্যই এটা খুবই সাধারণ ঘটনা। তবে চার সপ্তাহ বা তার বেশি স্থায়ী ডায়রিয়া (একটানা) দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া হিসাবে পরিচিত, যা বেশি মারাত্বক এবং রোগীর অন্য কোনো রোগের লক্ষণও হতে পারে সেটা।
ডায়রিয়া হওয়ার কারণসমূহ
ডায়রিয়া সাধারণত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া (যেমন, সালমোনেলা), ভাইরাস (যেমন, নরোভাইরাস বা রোটাভাইরাস), বা অন্ত্রের পরজীবী (যেমন, গিয়ার্ডিয়া) সংক্রমণের কারণে হয়। এই সংক্রমণগুলির যেকোনো একটির কারণে হওয়া ডায়রিয়াকে গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস বলা হয় ।
কোনো জায়গায় ভ্রমণ করলে যেখানকার আবহাওয়া ও পরিবেশের কারনে গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস হতে পারে (যেমন, দূষিত খাবার বা জল থেকে)। এগুলো অবশ্য এমনিতেই সেরে যায়।
তবে দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে অন্য কোনো অন্তর্নিহিত রোগ বা কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- দুগ্ধজাত পণ্যে থাকা ল্যাকটোজ সঠিকভাবে হজম করতে না পারা
- বিরক্তিকর পেটের সমস্যা
- পাকস্থলীর দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ
- অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ, যেমন ক্রোনস ডিজিজ
- কোলন ক্যান্সার ইত্যাদি।
এছাড়া কিছু ওষুধ সেবন করার ফলেও ডায়রিয়া হতে পারে। উপরিউক্ত সমস্যার মধ্যে যদি কোনোটি আপনার থেকে থাকে তবে আপনার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ডায়রিয়ার লক্ষণ ও উপসর্গ
ডায়রিয়ার প্রধান লক্ষণ হল দিনে তিন বা তার বেশি পাতলা পায়খানা হওয়া। পাশাপাশি আরও যে লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো থাকতে পারে:
- জরুরীভিত্তিতে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর টয়লেটে যাওয়া
- পেটে ব্যথা এবং পেট ফেঁপে থাকা
- পায়খানার রঙ পরিবর্তিত হওয়া
- পায়খানায় মিউকাস, পুঁজ, রক্ত বা চর্বি লেগে থাকা
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
- জ্বর
- পানি পিপাসা
- শারীরিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তিভাব
- মাথা ব্যাথা বা মাথা ঘোরানো
- খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া ইত্যাদি।
যেভাবে ডায়রিয়া পরীক্ষা করা হয়
ডায়রিয়ার লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো শুনার পর ডাক্তার সাধানরত সম্ভাব্য যেসব পরীক্ষার পরামর্শ দেন তা হলো:
রক্ত পরীক্ষা: এক্ষেত্রে রক্ত কণিকার সংখ্যা, ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স পরিমাপ বা কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হতে পারে যা আপনার ডায়রিয়া কতটুকু গুরুতর নির্দেশ করতে সাহায্য করবে।
পায়খানা পরীক্ষা: ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবীর কারণে আপনার ডায়রিয়া হয়েছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য ডাক্তার পায়খানা পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন।
এছাড়াও অন্যান্য পরীক্ষা রয়েছে তবে এই দুটিই আমাদের দেশে বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি।
ডায়রিয়ার চিকিৎসা
যদিও ডায়রিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, তারপরেও সুস্থ হওয়ার জন্য ডাক্তার ওষুধ বা অন্যান্য চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন।
অ্যান্টিবায়োটিক
অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট ডায়রিয়ার চিকিৎসায় কার্যকরী ভুমিকা রাখে। তবে ডায়রিয়া যদি ভাইরাসজনিত হয় তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজ করবে না।
স্যালাইন
ডায়রিয়া হলে দেহে তীব্র পানিশুন্যতার সৃষ্টি হয়। যার ফলে দেহে সোডিয়াম বা পটাসিয়ামের মতো খনিজ লবণের ঘাটতি তৈরি হয়। এই লবণের ঘাটতি পূরন করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ওরাল স্যালাইন পান করা। পাশাপাশি কিছু ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস, জুস ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। যদি এসবে পেটের সমস্যা বাড়ে বা বমি হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
অন্যান্য রোগের চিকিৎসা
যদি আপনার ডায়রিয়া অন্য কোনো গুরুতর রোগের কারণে হয়, যেমন পাকস্থলীর প্রদাহ, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে হবে।
ডায়রিয়ার ঘরোয়া প্রতিকার
ডায়রিয়া সাধারণত ঘরোয়া কিছু নিয়ম মেনে চললে এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। এরকম কিছু উপায় হচ্ছে:
১. ডায়রিয়ার প্রতিকারে খাবার স্যালাইনের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিবার পায়খানার পর খাবার স্যালাইন পান করুন। প্রয়োজনে ঘরে তৈরি খাবার স্যালাইনও উপকারে আসবে।
২. স্বাস্থ্যকর জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি পান করতে পারেন। তবে চা, কফি ইত্যাদি ডাই-ইউরেটিক্স জাতীয় পানীয় এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
৩. দুগ্ধজাত পন্য এবং চর্বিযুক্ত, উচ্চ ফাইবার বা চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
৪. বিভিন্ন ফল এবং সবজি, যেমন- পেঁপে, কলা ইত্যাদি পেটের সমস্যা খুবই উপকারী। এগুলো দিয়ে তরকারি রান্না করে খেতে পারেন।
৫. পেটের সমস্যা থাকা অবস্থায় চাল জাউ হিসেবে রান্না করে খেতে পারেন। এটা আপনার পায়খানা স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে।
৬. পায়খানা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করলে মোটামুটি সব ধরণের খাবার খেতে পারবেন, তবে ২-১ দিন কম ফাইবারযুক্ত খাবার বেছে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
কয়েকদিন নিয়ম মেনে চললে আশা করা যায় কয়েকদিনের মধ্যেই আপনি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন।
তাছাড়া ডায়রিয়া প্রতিরোধে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং বাঁসি-পঁচা খাবার একদমই খাওয়া যাবে না।