মৃত সাগর বা ডেড সী: যে সাগরে মানুষ ডুবে না।

মৃত সাগরের অপর নাম “লবনাক্ত সাগর”। এটিকে সাগর বলা হলেও আসলে এটি ইস্রায়েল এবং জর্ডান সীমান্তে অবস্থিত একটি লবণের হ্রদ। এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠের সর্বনিম্ন বিন্দু হিসাবেও পরিচিত কারণ তা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৭১ ফুট (৪১৮ মিটার) নিচে অবস্থিত। এটিকে বিশ্বের গভীরতম হাইপারস্যালাইন হ্রদও বলা চলে। লবনাক্ততার দিক দিয়ে এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত পানির উৎস, যার লবণাক্ততা প্রায় ৩০ শতাংশ (গড় সমুদ্রের লবণাক্ততার চেয়ে প্রায় ৮.৬ গুণ বেশি)। শুধুমাত্র জিবুতিতে অবস্থিত আসাল হ্রদের লবণাক্ততা এর চেয়ে বেশি।

ডেড সী বা মৃত সাগর: যে সাগরে মানুষ ডুবে না

মজার বিষয় হল পানির অতিরিক্ত লবনাক্ততার কারণে সেখানকার পানির ঘনত্ব মানুষের দৈহিক ঘনত্বের চেয়েও বেশি। যার কারণে মানু্ষ সেই পানিতে সাতার কাটা ছাড়াই ভেসে থাকতে পারে।

মৃত সাগর এর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৪২ মাইল (৬৭ কি.মি.) এবং প্রস্থ ১১ মাইল (১৮ কি.মি.)। জর্ডান নদী এর প্রধান উপনদী। মৃত সাগরটি ইহুদি, মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার অবস্থান হিসেবে গুরুত্ব বহন করে।

My bangla blog এর সকল পোস্ট গুগল নিউজে পেতে ভিজিট করুন এখানে Google news

ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু

আরও পড়ুন:  ফকল্যান্ড দ্বীপ পরিচিতি। বিখ্যাত ফকল্যান্ড যুদ্ধ।

মৃত সাগর বিখ্যাত গ্রেট রিফ্ট ভ্যালিতে অবস্থিত। ৩,৭০০ মাইল (৬,০০০ কিমি) দীর্ঘ গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি তুরস্কের টরাস পর্বতমালা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার জাম্বেজি উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত ।

মৃত সাগরের পশ্চিমে জুডিয়ার পাহাড় এবং পূর্বে ট্রান্সজর্ডানিয়ান মালভূমি অবস্থিত। এর পূর্বের তীর জর্ডান এবং পশ্চিম তীর ইস্রায়েল এবং ফিলিস্তিনের অন্তর্গত। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে তা ইসরায়েলের দখলে রয়েছে।

মৃত সাগর সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত। জর্ডান নদী এটিতে প্রবাহিত একমাত্র প্রধান নদী। জর্ডান থেকে প্রতি বছর গড়ে ১৯ বিলিয়ন ঘনফুট (৫৪০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার) পানি সেখানে প্রবাহিত হয়। আশেপাশের পাহাড় থেকে ছোট ছোট নদীর পানি প্রবাহিত হয় যেগুলি সাগরে মিশে যায়। বন্যার সময় মৃত সাগরের লবণের পরিমাণ তার স্বাভাবিক অবস্থা ৩০-৩৫ শতাংশ থেকে নিচে নেমে যেতে পারে।

ডেড সী বা মৃত সাগর: যে সাগরে মানুষ ডুবে না

মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে খুবই কম বৃষ্টিপাত হয়। মৃত সাগরের উত্তরাঞ্চলে প্রতি বছর চার ইঞ্চি বৃষ্টি হয়, যেখানে দক্ষিণ অংশে মাত্র দুই ইঞ্চি বৃষ্টি হয়। মৃত সাগরের পূর্বের উঁচু ভূমিতে মৃত সাগরের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।

আরও পড়ুন:  পৃথিবীর দীর্ঘতম নীল নদ।

মৃত সাগর এর আশেপাশের গড় তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে ৩২ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালে ২০ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

উদ্ভিদ ও প্রানীজগৎ

এই সমুদ্রকে “মৃত” বলা হয় কারণ এর উচ্চ লবণাক্ততার কারণে কোনো মাছ বা ম্যাক্রোস্কোপিক জলজ জীব এতে বাস করতে পারে না। যদিও সামান্য পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের উপস্থিতি সেখানে লক্ষ্য করা যায়। মৃত সাগরের পানিতে কোনো জলজ জীব বাস না করলেও সেটি আফ্রিকা এবং ইউরোপের অতিথি পাখিদের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। তাছাড়া আশেপাশের পাহাড়গুলো বাদুড়, বনবিড়াল, উট, আইবেক্স, খরগোশ, হাইরাক্স, শিয়াল, এমনকি চিতাবাঘের মতো প্রাণীদের অভয়ারণ্য।

মৃত সাগর এর বর্তমান পরিস্থিতি

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানির গতিপথের পরিবর্তনের কারণে মৃত সাগর আস্তে আস্তে সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। ১৯৭০ সালে এটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৯৫ মিটার নিচু ছিল। সেখান থেকে ২০০৬ সালে এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪১৮ মিটার নিচে নেমে আসে। যদিও অদূর ভবিষ্যতে মৃত সাগর সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে সেখানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে।

Leave a Comment