সেন্ট হেলেনা: নেপোলিয়নের নির্বাসনের দ্বীপ। Saint helena

সেন্ট হেলেনা বিশ্বের অন্যতম দূরবর্তী, বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোর মধ্যে একটি। এটি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ যাকে আগ্নেয়গিরির উৎসস্থলও বলা চলে।

সেন্ট হেলেনা: নেপোলিয়নের নির্বাসনের দ্বীপ।
Source: Wikimedia.org

দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে অবস্থিত প্রত্যন্ত দ্বীপটি প্রাক্তন ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নির্বাসনের স্থান হিসাবে বিখ্যাত। সেন্ট হেলেনা দ্বীপে ১৮১৫ সালে তাকে নির্বাসিত করা হয়েছিল এবং  সেখানেই ১৮২১ সালে তার মৃত্যু হয়। সেখানকার লংউড হাউজে নেপোলিয়ন ছিলেন এবং পরবর্তীতে সান ভ্যালিতে তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। বর্তমানে সেন্ট হেলেনা দ্বীপটি যুক্তরাজ্যের অধীনে রয়েছে।

My bangla blog এর সকল পোস্ট গুগল নিউজে পেতে ভিজিট করুন এখানে Google news

দ্বীপটি ১৫০২ সালের ২১ মে পর্তুগিজ ন্যাভিগেটর জোয়াও দ্যা নোভা আবিষ্কার করেন এবং হেলেনা নামের একজন ব্যাক্তির নামে নামকরণ করেন। পর্তুগিজরা এটিকে জনবসতিহীন অবস্থায় খুঁজে পেয়েছিল এবং সময়ের সাথে সাথে কিছু বাড়িও তৈরি করেছিল, যদিও কোন স্থায়ী বসতি স্থাপন করা হয়নি।

সেন্ট হেলেনা দ্বীপের ইতিহাস

১৫৯১ সালে টমাস ক্যাভেন্ডিশ নামক ব্যাক্তি দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রথম ইংরেজ হিসেবে দ্বীপটিতে গিয়েছিলেন। প্রায় ১৬০০ সাল থেকে দ্বীপটিতে পর্তুগাল, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং হল্যান্ডের নাবিকরা যাতায়াত শুরু করে।ডাচরা ১৬৪৫ এবং ১৬৫৯ সালে দ্বীপটি নিজেদের বলে দাবি করেছিল। তখন এটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক একটি চুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছিল।ডাচরা ১৬৭৩ সালে দ্বীপটি পুনরুদ্ধার করে। কিন্তু দুই মাস দখলে রাখার পর ইংরেজ নৌবাহিনী কর্তৃক তাদের উচ্ছেদ করা হয় এবং ইংরেজ রাজা দ্বিতীয় চার্লস কর্তৃক দ্বীপটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে পুনরায় হস্তান্তর করা হয়।১৮১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে সেন্ট হেলেনাকে নির্বাসিত করে। তাকে ওই বছরের অক্টোবরে দ্বীপে নিয়ে আসা হয়। ডিসেম্বরে তাকে লংউডে স্থানান্তরিত করা হয় যেখানে ১৮২১ সালের মে মাসে তিনি মারা যান। এই সময়কালে দ্বীপটি সৈন্যদের দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মধ্যে ছিল। ১৮৪০ সালে নেপোলিয়নের দেহ ফ্রান্সে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।দ্বিতীয় বোয়ার যুদ্ধের সময় (১৮৯৯-১৯০২), ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী বোয়ার যুদ্ধবন্দীদের দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃক মুক্তি দিতে পারে এই ভয়ে দ্বীপে প্রায় ৫,০০০ যুদ্ধবন্দিদের আটক করে ।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দ্বীপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লিজ দেওয়া হয়েছিল এবং সেখানে একটি বড় বিমানঘাঁটি তৈরি করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন:  ফকল্যান্ড দ্বীপ পরিচিতি। বিখ্যাত ফকল্যান্ড যুদ্ধ।

জনসংখ্যা ও অন্যান্য

সেন্ট হেলেনা দ্বীপের মোট এলাকা প্রায় ৪১০ বর্গকি.মি.। সেন্ট হেলেনায় প্রায় কয়েক হাজার বাসিন্দা রয়েছে যাদের বেশিরভাগ ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছে । সাম্প্রতিককালে তাদের অনেকে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে কিংবা যুক্তরাজ্যে চলে গেছে। সেখানকার প্রধান ধর্ম হল খ্রিস্টধর্ম।

নেপোলিয়নের নির্বাসনের দ্বীপ সেন্ট হেলেনা

১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দড়ি এবং স্ট্রিং তৈরির জন্য নিউজিল্যান্ড শণের চাষ এবং প্রক্রিয়াজাত করাই ছিল সেখানকার অর্থনীতির একমাত্র চালিকাশক্তি। সেন্ট হেলেনার অর্থনীতি এখন খুবই দুর্বল, বলতে গেলে দ্বীপটি প্রায় পুরোপুরি লন্ডনের সাহায্যে টিকে আছে।নেপোলিয়নের নির্বাসনের জায়গা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠার কারণে সেখানে পর্যটন শিল্পও গড়ে উঠেছে। তাছাড়া সেন্ট হেলেনাতে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কফিও উৎপাদন করা হয়।সেন্ট হেলেনিয়ান পাউন্ড সেখানকার স্থানীয় মুদ্রা। সেন্ট হেলেনার সরকার নিজস্ব মুদ্রা এবং নোট তৈরি করে।

সেন্ট হেলেনা অনেক প্রাণী এবং উদ্ভিদের আবাসস্থল। এখানে বসবাসকারী ৪০০ টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে যার অনেকগুলি বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই দ্বীপটি ভবিষ্যতে আরও পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে বলে আশা করা যায়।

Leave a Comment